মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৫ অপরাহ্ন
বাগেরহাট প্রতিনিধি ॥ বাগেরহাটে ধান সংগ্রহে ধীরগতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত দুই বছরও উপকূলীয় এই জেলায় বোরো মৌসুমের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। রোববার (২২ মে) পর্যন্ত জেলায় মাত্র ১৩৪ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে।
২০২০ সালে ৬ হাজার ৪১৮ টন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ৫ হাজার ৯৭৬ টন, এবং ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫৩০ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছিল ৬ হাজার ৭৩৭ টন। গত দুই বছরের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ আগস্টের মধ্যে এই মৌসুমের সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। এদিকে ধান বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও হয়রানির কারণে সরকারিভাবে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে ধান সংগ্রহের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করবে তারা।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে বাগেরহাট জেলায় ৮ হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৯ টন, মোরেলগঞ্জে ১ হাজার ৪৩ টন, রামপালে ৬২৯ টন, শরণখোলায় ৬৫ টন, ফকিরহাটে ১ হাজার ২৩৬ টন, মোল্লাহাটে ১ হাজার ২০৬ টন, কচুয়ায় ১ হাজার ১১০ টন এবং চিতলমারী উপজেলায় ১ হাজার ৮০৭ টন রয়েছে।
এই মৌসুমে বাগেরহাটে ৫৯ হাজার ২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি। এতে প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কৃষক নাজমুল শেখ বলেন, আমাদের এখানে ২০ দিন পরে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কোনো নিশ্চয়তা নেই সরকারিভাবে বিক্রি করতে পারব কি না। তাই কম পাই-বেশি পাই লোকসান হওয়ার আগেই বিক্রি করে দিয়েছি।
২৮ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কৃর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করার ১৯ দিন পর ১৭ মে বাগেরহাটে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়।
কচুয়া উপজেলার কৃষক আমজেদ আলী মোল্লা বলেন, এ বছর প্রায় ১১০ মণ ধান হয়েছে। বছরের খোরাক (যে পরিমাণ চাল লাগে- সেই পরিমাণ ধান) রেখে ঈদের আগেই ৭৫০ টাকা দরে ৭০ মণ ধান বিক্রি করেছি। শুনেছি সরকারি গুদামে ১ হাজার ৮০ টাকা মন বিক্রি করা যায়। কিন্তু কীভাবে বিক্রি করব? আমরা তো নিয়ম জানি না।
নাম না প্রকাশের শর্তে কৃষকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ কৃষকের তালিকা হয় ব্যক্তি সম্পর্ক ও রাজনৈতিক বিবেচনায়। যারা কৃষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, তাদেরও ধান বিক্রয় করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়া ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচার-প্রচারণারও অভাব রয়েছে। এসব কারণে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এম.এম. তাহসিনুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের কারণে বাজারমূল্য যে দিকে যাচ্ছে, তাতে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে না। তারপরও আমাদের হাতে সময় রয়েছে, আমরা শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করব। এ ছাড়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬ হাজার ৬৮৫ টন চাল সংগ্রহের জন্য ২৪ জন মিলারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।